শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি ও এর বিরূপ প্রভাব : অভিভাবক হিসাবে আপনার করণীয়
ফ্যাক্ট
স্মার্টফোন এখন আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং শিক্ষার, বিনোদনের এবং তথ্য সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে, স্মার্টফোনের যথাযথ ব্যবহার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নির্দেশনা এবং নিয়ন্ত্রণের অভাবে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের ভবিষ্যৎ আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিসংখ্যান অনুসারে, ৮ থেকে ১২ বছরের শিশুদের মধ্যে ৫৩% স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং ১৩ থেকে ১৮ বছরের কিশোরদের মধ্যে এই হার প্রায় ৮৫%। এই দীর্ঘ সময়ের স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে ৪০% শিশুদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা এবং ২৫% শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিশুদের উপর স্মার্টফোনের প্রভাব
স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী, ৮ থেকে ১২ বছরের শিশুদের মধ্যে প্রায় ৫৩% স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই দিনে গড়ে ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে কাটায়। এই দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার কারণে তাদের চোখের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা এবং স্থূলতার মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের মধ্যে অস্থিরতা, মনোযোগের ঘাটতি এবং সামাজিক দক্ষতার অভাব ঘটাতে পারে। শিশুদের মানসিক বিকাশে বাস্তব জীবনের সামাজিক যোগাযোগ এবং খেলার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে এই সুযোগগুলি সীমিত হয়ে যায়, যা তাদের ভবিষ্যৎ আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আমাদের করণীয়
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় স্মার্টফোন সঠিকভাবে ব্যবহার এর উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাবা মা হিসাবে আমাদের বাচ্চা দের হাতে আমরা যখন একটা স্মার্টফোন তুলে দেই আমরা কী আসলে খেয়াল রাখি আমাদের বাচ্চা রা কী দেখছে? যারা আসলে তদারকি করেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই কিন্তু আমার লেখা টা তাদের জন্য যারা আসলে সময়ের অভাবে ঠিকমতো খেয়াল রাখতে পারছেন না।
দেখুন কোনও বাবা মা ই চায় না তাদের সন্তান কে কোনও খারাপ সঙ্গ অথবা খারাপ পরিবেশে রাখতে। ভালো পরিবেশ এর জন্য এরকম ও দেখেছি অনেক পরিবার এলাকা পাল্টে ফেলেন কিংবা স্কুল পাল্টে ফেলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যেই অনেকে আবার একটা ১-১.৫ বছর এর বাচ্চার হাতে স্মার্টফোন তুলে দেই কারণ বাচ্চা এটা পেলে কোনও কান্নাকাটি ছাড়াই খাওয়া দাওয়া করে কোনো দুষ্টমী করে না। কিন্তু একটা স্মার্টফোন এর সাথে ইন্টারনেট থাকা মানে পুরা পৃথিবী তার সামনে উন্মুক্ত।
হ্যাঁ আপনি হয়তো এটা খেয়াল রাখেন যে বাচ্চা যেন কোনও এডাল্ট কন্টেন্ট না দেখতে পারে। আমি সেটার কথা বলছিনা। বাচ্চাদের কন্টেন্ট এর নামে যেসব জিনিস সে দেখছে ওইগুলো কী তার জন্য সঠিক? আমি ইউটিউব এ অনেক “বাচ্চাদের” ভিডিও দেখেছি যেগুলা কোনোভাবেই একটা বাচ্চার জন্য সঠিক হতে পারে না। একটা বাচ্চার স্কিল, ধৈর্য, মনন বিকশিত হওয়া শুরু করে অনেক ছুটোবেলা থেকে। স্কুলে যাওয়ার আগেই কিন্তু সবকিছু ডেভেলপ হয়ে যায়।
ভালো অভিভাবকত্বের কৌশল
- সময় সীমা নির্ধারণ: শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় সীমাবদ্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেটা স্ক্রিন টাইম হিসাবে উন্নত বিশ্বের বাবা মা এর কাছে পরিচিত। দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার না করার জন্য একটি রুটিন তৈরি করতে হবে। এতে করে বাচ্চার মধ্যে একটা নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
- বিকল্প কার্যক্রম: শিশুদের সময় কাটানোর জন্য বই পড়া, খেলা এবং সৃজনশীল কাজের মতো বিকল্প কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে তাদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং স্মার্টফোনের প্রতি নির্ভরশীলতা কমবে। একটু খোঁজ করলেই আপনারা এরকম শিক্ষণীয় বিকল্প খেলনা গুলো পেয়ে যাবেন।
- শিক্ষামূলক কন্টেন্ট নির্বাচন: স্মার্টফোনে শুধুমাত্র শিক্ষামূলক এবং মানসম্মত কন্টেন্ট দেখতে দেওয়া উচিত। ইউটিউব কিডস এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক অ্যাপ এই ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
- পরিবারের সময়: আপনার শিশুর সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আপনার সময়। পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং একসাথে বিভিন্ন কার্যক্রম করা শিশুদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। এতে শিশুদের মধ্যে সামাজিক দক্ষতা এবং পারিবারিক বন্ধন মজবুত হয়।
- উদাহরণ স্থাপন: অভিভাবকরা নিজেরাও স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শন করলে শিশুরাও তা অনুসরণ করবে। সন্তানদের সামনে কম সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে।
আমি জানি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমাদের এটা মেনে নিতে হবে যে মা বাবা হিসাবে আমরাই স্মার্টফোন ছাড়া থাকতে পারি না। তো একটা বাচ্চা যখন দেখবে তার মা বাবা সর্বক্ষণ স্মার্টফোন চালায় স্বভাবতই বাচ্চা ও এটা চাইবে। বাবা মা হিসাবে আমরা একটু সময় নিয়ে ভালো ভালো কন্টেন্ট বাছাই করে এগুলো দিতে পারি। একটু বড় হয়ে গেলে ইউটিউব এ রেস্ট্রিক্ট মোড অন করে দিতে পারি এমনকি আপনার বাসার ওয়াইফাই টাও কিন্তু আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যে কোন ডিভাইসে কোন ধরনের রেস্ট্রিকশন থাকবে। হ্যাঁ একটা সময় বাচ্চা এগুলো বুঝে যাবে, কিন্তু ততদিনে তার মধ্যে ভালো কনটেন্ট দেখার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে।